নতুনদের পর্বতারোহণ শুরু করতে কী কী করা উচিত?

Spread the love

সবার প্রথমে আপনাকে জানতে হবে পর্বতারোহণ কী, কীভাবে করে, কারা করে, কোথায় করে। এরকম সাধারণ বিষয় জানা থাকলে আরেকটু বিস্তারিত জানা ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

✓ পর্বতারোহণ সম্পর্কে ধারনা নিতে হলে সবচেয়ে বেশি হেল্প করবে পর্বতারোহণ নিয়ে লিখা বই গুলো। পাশাপাশি ইউটিউবে একটু সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন নানান রকমের পর্বতারোহণ সম্পর্কিত ভিডিও, ডকুমেন্টারি অথবা মুভি। বই অথবা ভিডিও থেকে সব কিছু যে আপনি বুঝে যাবেন তেমন কিন্তু না। এরজন্য অবশ্যই অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। সব থেকে ভাল হয় বাংলাদেশে যেই সংগঠন গুলো পর্বতারোহণ নিয়ে কাজ করছে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারেন। এতে করে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে গাইডেন্স যেমন পাবেন তেমনি উৎসাহ পাবেন নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার। বই ও ভিডিও দেখার পরে, পর্বতারোহণের রোমাঞ্চ গুলো আপনাকে উৎসাহিত করলে, পর্বতারোহণ এর লাইফ স্টাইল নিয়ে স্টাডি করতে পারেন।

পর্বতারোহণ বাস্তবায়নের জন্য ৫ টি উল্লেখযোগ্য বিষয় প্রয়োজন –

১. ইচ্ছা/আগ্রহ

২.শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি

৩. সময়

৪. অর্থ

৫. প্রশিক্ষণ ও চর্চা

পর্বতারোহণ কষ্টসাধ্য, ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ন এবং সময় সাপেক্ষ একটি এক্টিভিটি। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে অনেকটা বের হয়ে পর্বতারোহণের চর্চা করতে হবে। নিজের স্বাভাবিক জীবনের সকল এক্টিভিটির পাশাপাশি এই স্পোর্টসের সাথে নিজেকে জড়ানোর ইচ্ছা থাকাটা জরুরী। এখানে আপনার সময়, অর্থ, শ্রম অনেক কিছুই দিতে হবে। ইচ্ছে বা আগ্রহ পরিপূর্ন ভাবে না থাকলে, খুব বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

 পর্বতারোহণের কঠিন পরিশ্রমের কাজ। আপনার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। তাই নিজেকে সেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। প্রথমেই আপনার শরীরকে প্রস্তুত করতে হবে।

পর্বতারোহণ কোন সাধারণ এক্টিভিটি নয়। এখানে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। সেই প্রতিবন্ধকতা গুলোকে মোকাবেলা করার জন্য আপনার শরীরকে প্রস্তুত রাখতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে এবং দেশের ভেতরে যে পাহাড় গুলো আছে সেখানে নিয়মিত যেয়ে, নিজের মাসল গুলোকে প্রস্তুত করতে হবে। যত বেশি পাহাড়ে ট্রেক করবেন আপনার মাসল তত বেশি প্রস্তুত হবে, অতি উচ্চতায় সাবলীল থাকতে। ( মনে রাখবেন পর্বতারোহণ শিখতে হলে আপনাকে পর্বতে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।)

শারীরিক প্রস্তুতি থেকে বেশি জরুরী মানসিক প্রস্তুতি। পর্বতারোহণ বা ট্রেকিং হচ্ছে এরবিক এক্টিভিটি। একই কাজ অনেকক্ষণ এবং অনেকদিন ধরে করতে হবে। মানে হাঁটা, হাঁটা আর হাঁটা। অধিকাংশ সময়েই আমাদের হাঁটতে হয়। একই ভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের ধৈর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত কষ্ট আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় মেনে নিতে চায় না। বারবার ফিরে যাওয়ার জন্য আমাদের ফোর্স করে। ঠিক সেই সময়গুলোতেই আমাদের মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। আমরা তো জানি আমাদের মস্তিষ্ক একটু অলস প্রকৃতির। তাই কঠিন অভিযানগুলোতে তাকে অ্যাক্টিভ রাখতে আপনার বেশ কিছু অ্যাক্টিভিটি নিয়মিত করতে হবে।

  • মানসিক শক্তি বাড়াতে-
  • নিয়মিত এক্সারসাইজ চালিয়ে যেতে হবে।
  • নতুন নতুন বই এবং ভিডিও দেখতে হবে
  • পর্বতারোহণের ব্যাসিক এবং অ্যাডভ্যান্স টেকনিকগুলো শিখতে হবে এবং চর্চা করতে হবে নিয়মিত।
  • ইকুইপমেন্টগুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর সঠিক ব্যবহার শিখতে হবে।
  • দেশে বিভিন্ন গ্রুপ আছে যারা পর্বতারোহণ করে, তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেখানে পর্বতারোহণ সম্পর্কে অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের পরামর্শ নিতে পারবেন।
  • নিজের DNA তে পর্বতারোহণের সিরাম ইনজেক্ট করতে হবে।
  • নিজের নিয়মিত অ্যাক্টিভিটির পাশাপাশি পর্বতারোহণ নিয়ে চর্চার জন্য সময় দিতে হবে। মোট কথা পর্বতারোহণের শিক্ষা, বিভিন্ন টেকনিক সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা, ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের উপর দক্ষতা যার যত বেশি থাকবে, মানসিকভাবে সে তত শক্ত থাকবে পাহাড়ে।

সময় আপনার নিয়মিত কাজের মাঝে পর্বতারোহণকে সময় দেয়ার মত সময় আছে কি না সেটা দেখতে হবে। অথবা সময় বের করতে হবে। মোটামুটি একটা অভিযানের জন্য মিনিমাম ১৫ থেকে ২০ দিনের প্রয়োজন হয়। তার আগে প্রস্তুতির জন্যও প্রয়োজন হয় অনেক সময়। চাকরী জীবনে বসের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, ছাত্র জীবনে পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, পর্বতারোহণের জন্য! সব কিছু ম্যানেজ করে সময়টা বের করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। তারপরেও পরিকল্পনা এবং সব কিছুর সমন্বয় করেই অভিযানে যেতে হবে।

কথায় বলে, ‘অর্থই অনর্থের মূল’। সেরকম ভাবে “অর্থই পর্বতারোহণের মূল” বললে ভুল হবে না। টাকা ছাড়া পর্বত অভিযান অসম্ভব। যেহেতু আমাদের অন্য দেশে যেয়ে অভিযান করতে হয় তাই আমাদের খরচের পরিমাণটাও একটু বেশি হয়। তাছাড়া এর সব কিছুই একটু ব্যয়বহুল। তাই পর্বত অভিযান করতে হলে টাকা জমাতে হবে অথবা নিজের টাকা থাকতে হবে। নেপালে সাধারণ একটা ট্রেক যেতে হলে মিনিমাম ৫০/৬০ হাজার টাকা লেগে যায় পাশাপাশি নিজের সরঞ্জামের জন্যও ২০/৩০ হাজার লেগে যায়। অভিযান যত বড় হবে খরচ তত বেশি হবে। নিজের টাকা থাকলে তো চিন্তাই নেই, তবে যদি টাকা না থাকে, তাহলেও অভিযান করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনার স্পন্সর ম্যানেজ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

 প্রশিক্ষণ এবং চর্চা হচ্ছে অন্যতম জরুরী প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য এখন আমাদের দেশেই অনেকগুলো ক্লাব এবং সংগঠন আছে যাদের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পারেন এবং তাদের সাথে যুক্ত হয়ে নিয়মিত চর্চা করতে পারেন। এছাড়াও ইন্ডিয়া এবং নেপালে মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ হয়, আপনি চাইলে সেখান থেকেও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একেবারে হাতে কলমে প্যাকেজ আকারে পর্বতারোহণের লাইফ স্টাইলটা দেখে ও শিখে নিতে পারবেন। যার জন্য ১০০০+ ডলার খরচ করতে হবে। আমার পরামর্শ দেশের সংগঠন গুলোর সাথে ট্যাগ হয়ে পর্বতারোহণ বিষয়ে ধারণা নিয়ে, তাদের সাথেই অভিযানে চলে যেতে পারেন এবং সেখানেই প্রশিক্ষণ এবং চর্চা করে নিতে পারবেন।

পৃথিবীতে এমন ঘটনা আছে, ফ্রান্সের একজন পর্বতারোহী (আসলে পর্বতারোহী বললে ভুল হবে কিনা সেটা আপনারা ভেবে দেখেন) তার গার্ল ফ্রেন্ডকে ইমপ্রেস করতে এভারেস্ট অভিযানে চলে যায়। যেখানে এভারেস্ট কি জিনিস সে জানতোই না! কি কি নিতে হয়, সেটাও জন্য না। পর্বতারোহণ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ হয়েও এভারেস্ট অভিযানে যান এবং সামিট ও করে আসেন।

তাই ইচ্ছা শক্তি এবং দ্রুত শিখে নেয়ার সক্ষমতা থাকলে, চলতে চলতেও শিখে ফেলতে পারবেন

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন,

পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক এবং পর্বতারোহী


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *